
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য রচনা: আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা’ ক্লাস ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ / class 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12 ও ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণী এবং এসএসসি / SSC ও এইচএসসি / HSC সমমান পরীক্ষা pdf সহ সকল ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার জন্য যথাক্রমে; ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০ অথবা 100, 150, 200, 250, 300, 400, 500, 1000 শব্দ / শব্দের ৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ টি বাক্যে, প্যারা বা পয়েন্ট আকারে, আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি দেওয়া হল।
রচনা: আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা
ভূমিকা : বলা যায়, স্মৃতি সবসময়ই বেদনাময়, তা সে সুখের হোক, অথবা দুঃখের। সুখের হলে তা আমাদের অতীতের সুখের দিন হারানোর বেদনায় সঞ্চিত করে, আর দুঃখের সাথী কে যায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
আমার এই ক্ষুদ্র স্মৃতির খাতায় কত ঘটনাই না ভিড় জমিয়েছে। কিন্তু মানুষ সহজেই ভুলে যায়। তবু স্মৃতির খাতায় ময়লা জমলেও অক্ষরগুলো একেবারে অস্পষ্ট হয়ে যায় না, তাই মাঝে মাঝে কোনো অস্পষ্ট নাম, কোনো অস্পষ্ট ঘটনা মনে পড়ে যায়। কিন্তু সবচেয়ে করুণ হয়ে দেখা দিয়েছে আমার জীবনের যে ঘটনাটি তা জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারব বলে মনে হয় না ৷
সূত্রপাত : মাত্র পাঁচ মাস আগের ঘটনা। আমার বাল্যবন্ধু খোকন এসে পড়ার ঘরে পিছন দিক থেকে আমার চোখ চেপে ধরল। বুঝতে পারলাম বন্ধু খোকন। আমি তার নাম বলতেই সে সশব্দে হাসতে হাসতে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। তারপর দু’জনে বসে বসে অনেকক্ষণ আলাপ করলাম। কথা বলতে বলতে আমার খাতায় সে একটি মস্তবড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকল, নিচে লিখল-
তোমার খাতার প্রথম পাতায় এঁকে দিলাম আলপনা,
আমার ছবি কইবে কথা যেদিন আমি থাকব না ।
লিখেই আমাকে দেখাল। আমি জানি খোকনের জীবনটাই একটা মস্তবড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। আব্বাকে হারিয়েছে পাঁচ বছর বসে। বিধবা মা প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করে যা পান তাতে দু’জনের সংসার চলে না। সেজন্য খোকন সকাল বিকাল দুটি ছেলেকে আর পরিচয় শিখিয়ে সামান্য কটা টাকা পায়। এই করে সে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেনি। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আর মাত্র ১০/২০ দিন আছে। খোকন চলে গেল। আমি পড়তে বসলাম।
অশনি সংকেত : পরীক্ষার পর দুই মাস বেশ আমোদ-প্রমোদেই কেটে গেল। তবু এই আনন্দের ফাঁকে ফাঁকেও খোকনের মুখে আমি দেখেছি হঠাৎ আসন্ন মেঘ। পরীক্ষা বিশেষ ভালো হয়নি। সুতরাং একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ওপর খোকন দুলছে। অবশেষে সেই দিন আসল। আমরা পত্রিকার জন্য রেল স্টেশনে গিয়ে ভিড় করলাম। সত্যিই অঘটন ঘটল। আমার রোল নং দ্বিতীয় বিভাগে সখলাম। পত্রিকার কোথাও খোকনের রোল নম্বর পাওয়া গেল না। খোকনকে সান্ত্বনা দেয় কার সাধ্য। কোনো রকমে তাকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে রাত দশটায় বাসায় ফিরলাম। মনে হচ্ছিল আমি পাশ না করে যদি খোকন পাশ করত তাহলে বিধবা মায়ের মুখে হাসি দেখে আমার প্রাণ জুড়াত।
অভিমানী বিদায় : একদিন ভোরে কাক না ডাকতেই লোকের গণ্ডগোলে জেগে উঠলাম। সুইসাইড খোকন সুইসাইড করেছে। শেষ রাতে খোকন চুপি চুপি পালিয়ে গিয়ে রেল লাইনে মাথা রেখে আত্মহত্যা করেছে। মাথা ঘুরে গেল-বসে পড়লাম। প্রকৃতিস্থ হয়ে এগিয়ে গেলাম। কোথায় সেই খোকন। একতাল মাংসপিণ্ড। পাশের জায়গাটুকু রক্তে রঞ্জিত। বাসায় ফিরে স্থির থাকতে পারলাম না। খাতা খুলে। দেখলাম সেই প্রশ্নবোধক চিহ্নটি আর নিচের লেখাটি-
আমার ছবি কইবে কথা যখন আমি থাকব না।
কিছুতেই কান্না রোধ করতে পারলাম না। চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। আব্বা এসে খবর দিলেন। কলেজে রেজাল্ট সিট এসেছে- খোকন তৃতীয় বিভাগে পাশ করেছে। পত্রিকায় ভুলে রোল নম্বর উঠেনি। কিন্তু কলেজের ফল কি ফিরিয়ে আনতে পারবে খোকনকে— পারবে কি বিধবার কান্না ভুলিয়ে তার মুখে হাসি ফোটাতে?
উপসংহার : চুপে চুপে একদিন খোকনের রক্ত রঞ্জিত তৃণের ওপর একটি পলাশের চারা রোপণ করে এসেছি। গাছটি বড় হয়েছে। হয়ত একদিন মধুবসন্তে এতে দেখা দিবে শত শত রক্তপলাশের সমারোহ- হয়ত্ একদিন কোকিল ডাকবে। গাড়ির লোকেরা উৎফুল্ল হয়ে বলবে ‘কি চমৎকার।’ আমি জানি এ রক্তপলাশ খোকনের বুকের রক্তে রাঙা আমি জানি এ বসন্তের মাধুরী অশ্রুসিক্ত।
আরও দেখুন ❏ রচনা: বাংলাদেশের লোকসাহিত্য