সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ, ফজিলত, অর্থ, পড়ার নিয়ম, ছবি, অডিও PDF
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ, ফজিলত, পড়ার নিয়ম [Sayyidul Istighfar]

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আসসালামু আলাইকুম সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ, ফজিলত, অর্থ, পড়ার নিয়ম, ছবি, অডিও PDF। ইস্তিগফারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় মুমিন-মনের উপলব্ধি। মানব মনের একটি অতি আকর্ষণীয় কাজ অন্যের অন্যায়গুলো বড় করে দেখা ও নিজের অন্যায়কে ছোট ও যুক্তিসঙ্গত বলে মনকে প্রবোধ দেওয়া। আমরা একাকী বা একত্রে যখনই চিন্তাভাবনা বা গল্প করি, তখনই সাধারণত অন্যের অন্যায়গুলো আলোচনা করি। মুমিনের আত্মিক জীবন ধ্বংসে এটি অন্যতম কারণ। মুমিনকে সদা সর্বদা নিজের পাপের কথা চিন্তা করতে হবে। এমনকি আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের বিপরীতে তাঁর ইবাদতের দুর্বলতাকেও পাপ হিসাবে গণ্য করে সকাতরে সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সকল প্রকার পাপকে কঠিন, ভয়াবহ ও নিজের জীবনের জন্য ধ্বংসাত্মক বলে দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে বারবার ক্ষমা চাইতে হবে। এ পাপবোধ নিজেকে সংকুচিত করার জন্য নয়। এ পাপবোধ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ভারমুক্ত, পবিত্র, উদ্ভাসিত ও আল্লাহর নৈকট্যের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য।
তাই ইসতিগফারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ -এর শেখানো বাক্য ব্যবহার করা উত্তম। সাধারণভাবে বিভিন্ন হাদীসে ইসতিগফারের জন্য ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি) এবং কখনো এর সাথে ‘ওয়া আতুবু ইলাইহি’ (এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি) বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ইস্তেগফারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হচ্ছে ‘সাইয়েদুল ইস্তেগফার‘। মুমিন যে কোনো ভাষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। ভাষা বা বাক্যের চেয়ে মনের অনুশোচনা ও আবেগ বেশি প্রয়োজনীয়।
Table of content...
সাইয়েদুল ইস্তেগফার – Sayyidul Istighfar
কোন মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে সে ব্যক্তিই উত্তম যে ভুল করার পর তওবা করে। তাই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উপর তওবা করা ফরয করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মুমিনগণ,তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।”[ সূরা নূর: ৩১]
তিনি আরও বলেছেন, تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا
“তোমরা আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে তওবা কর।”[ সূরা তাহরীম: ৮] সুতরাং প্রতিটি পাপের জন্য বান্দার তওবা করা অপরিহার্য। মানব জাতির নানা রকম ভুল পাপাচারে লিপ্ত হয় মহান আল্লাহতায়ালা এসব পাপ ও ভুলগুলো ক্ষমা করার জন্য মানব জাতিকে বিভিন্ন দোয়া ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহু তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সবচেয়ে উত্তম একটি দোয়া সাইয়েদুল ইস্তেগফার। বুজুর্গ আনেরা বলে থাকেন এই দোয়ার ফজিলত এত বেশি যে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এই দোয়াটাই সর্বোত্তম একটি দোয়া।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়া অর্থ সহ ছবি, অডিও ও PDF ডাউনলোড
সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়া এর অর্থ : হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উওর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। সকলের সুবিধার্থে Sayyidul Istighfar in bangla, arabic, english, fazilat, benefits translation, pic pdf download সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়াটি আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ ছবি, অডিও এবং PDF পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল ডাউনলোড করে নিন।
বিঃদ্রঃ অনেকের কাছে দোয়াটা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন – কঠিন এই দোয়া মুখস্থ করে আমল করার কি প্রতিদান। বিশেষ করে মা বোনদের উচিত – বেশি বেশি সকাল ও সন্ধ্যার দুয়াগুলো মুখস্থ করে রাখা, যাতে করে নামায বন্ধ থাকার দিনগুলোতে সারাদিন দুনিয়াবি কাজকর্ম করে বা গান শুনে, নাটক সিনেমা দেখে বা গল্পের বই না পড়ে আমলনামায় শুধু পাপ কাজ জড়ো করার পরিবর্তে ঐদিনগুলোতে কিছু নেক আমলও থাকলো – যার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে জান্নাতের আশা করা যেতে পারে। আর কঠিন হলেও কোনো কাজই অসম্ভব না, আপনি শুরু করুন দেখবেন খুব শীঘ্রই মুখস্থ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার কখন পড়তে হয়
ক্ষমা প্রার্থনার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই যখনই পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে ও রাতে এই দুই সময় পড়ার সবচাইতে উত্তম। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে পাঠ করে কেউ যদি দিনে মারা যায় তবে সে জান্নাতি কেউ যদি রাতে পাঠ করে ওই রাতে মারা যায় তাহলে সে জান্নাতি এর থেকে বোঝা যায় সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে ও রাতে দুবার পাঠ করা উচিত।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে সকালে ও বিকালে বিশেষ করে সকালে বিকেলে যেকোনো সময় পরে নিলেই হয়। তবে দৈনিক দুইবার সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়া উচিত কারণ সকালে পড়লে সারা দিনের ফজিলত পাওয়া যায় রাতে পড়লে সারা রাতের ফজিলত পাওয়া যায়।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর ফজিলত
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার ফজিলত রয়েছে অনেক। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সায়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ে সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহিহ বোখারি: ৬৩০৬ অর্থাৎ সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে বিকালে দুই বার পাঠ করলে সারা দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে সে জান্নাতের লাভ করবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস থেকে বোঝা যায় সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠের ফজিলত কত বেশি।
আরও দেখুন: শবে বরাত
সাইয়েদুল ইস্তেগফার সম্পর্কে হাদিস
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এই দোয়া পাঠ করবে এবং সে দিন সন্ধ্যার আগে মারা যাবে সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এই দোয়া পাঠ করবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসী হবে। সহিহ বুখারী: (৬৩০৬)
সাইয়েদুল ইস্তেগফার কোন সূরার আয়াত
আপনারা অনেকেই জানতে চান যে সাইয়েদুল ইস্তেগফার কোন সূরার কত নম্বর আয়াত? উত্তরঃ সাইয়েদুল ইস্তেগফার পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত কোন সূরার আয়াত নয়। সাইয়েদুল ইস্তেগফার হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া, যা ক্ষমা বা তওবা করার ক্ষেত্রে পাঠ করা হয়।