
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য রচনা: বাংলাদেশের লোকসাহিত্য’ ক্লাস ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ / class 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12 ও ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণী এবং এসএসসি / SSC ও এইচএসসি / HSC সমমান পরীক্ষা সহ সকল ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার জন্য যথাক্রমে; ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০ অথবা 100, 150, 200, 250, 300, 400, 500, 1000 শব্দ / শব্দের ৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ টি বাক্যে, প্যারা বা পয়েন্ট আকারে, বাংলাদেশের লোকসাহিত্য বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি দেওয়া হল।
রচনা: বাংলাদেশের লোকসাহিত্য
লোকসাহিত্য : মাটির কাছাকাছি থেকে যে সাহিত্য আমাদের আবহমান বাংলার দৃষ্টি-কালচার, সহজ গ্রামীণ আবেগ-অনুভূতি ও চিৎ- প্রবৃত্তির সাথে, ইতিহাসের সাথে, পুরাণের সাথে, মানুষের সভ্যতাও আমজনতার অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাই লোকসাহিত্য । জগতে মানবজীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার সংমিশ্রণে তৈরি কাহিনি নিয়ে যে সাহিত্য গড়ে ওঠে তাই লোকসাহিত্য। তা সম্পূর্ণ লোকজ এবং ব্যক্তিমনের উচ্ছ্বাস থেকে উৎসারিত। তাই কবি লোকজ ব্যক্তিমনের উচ্ছ্বাসকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন—
মনমাঝি তোর বইঠা নে রে
আমি আর বাইতে পারলাম না…।
ইংরেজিতে লোকসাহিত্যকে Folklore বলে। ‘নিজের কথা, পরের কথা, বাহ্য জগতের কথা শিল্পীর মনোবীণায় ঝংকৃত হয়ে জি সংযত রূপ নিয়ে যার প্রকাশ তাই সাহিত্য।’ এ সাহিত্যে সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তবতা বিধৃত হয়। পল্লিগীয়ের সাধারণ মানুর রস পিপাসা মিটানোর জন্য সাহিত্য সহজ, সরল, সাধারণ ও সাবলীল ভঙ্গিমায় বাণীরূপ লাভ করে। অল্প শিক্ষিত ও অশিত সাহিত্যিক, কবিদের আন্তরিকতায় ভরা এ সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যের এক বিশেষ অংশ জুড়ে আছে লোকসাহিত্য তথা বাংলাশের লোকসাহিত্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ। এদেশের হাজারো পাখির কলকাকলি আর বিচিত্র প্রকৃতি মানুষকে করেছোউল- আবার কখনো করেছে ভাবুক কবি। ফলে বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লোকসাহিত্যের নানা ষ্টান্ত। সমকালীন সমাজ জীবনের নানা ঐতিহাসিক তথ্যের সমারোহে ভরপুর এক সাহিত্য ‘লোকসাহিত্য’ যা প্রাণময় মানব সমাজ অতি সহজেই আকৃষ্ট করে। তাইতো গ্রাম বাংলার শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে বাদলা দিনে সহসা উচ্চারিত হয়—
রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে
খেঁকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে।
বাংলা লোকাাহিত্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিসম্ভারে নানারকম লোকজ অভিজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায়। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষি সম্পর্কিত বিষয়াদিও বংলা লোকসাহিত্যের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। যেমন-
কলা রুয়ে না কেটো পাত
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।
লোকসাহিত্যের উৎস: যেকোনো সাহিত্যের ভূমিই হচ্ছে মানুষের মন। লোকসাহিত্যের উৎস মানুষের মন থেকে মুখে মুখে। পল্লিগ্রামের অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত মানুষের অন্তরই এ সাহিত্যের একমাত্র আশ্রয়। পল্লির সাধারণ অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত মানুষের বিচিত্র অভিজ্ঞতাই লোকসাহিত্যের একমাত্র প্রাণ। আর এজন্যই লোকসাহিত্যের সাথে মানুষের আন্তরিক সংযোগ নিহিত। আর এ কারণে বংলা সাহিত্যের অঙ্গনে লোকসাহিত্য সমাদৃত হয়ে আছে। লোকসাহিত্য বাঙালির অন্তরের সম্পদ। লোকসাহিত্য অনেকটা ভৌগোলিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
সংস্কৃতির ধারক লোকসাহিত্য : লোকসাহিত্যের একমাত্র ধারক হচ্ছে সমকালীন বাংলার পল্লিসমাজ। ফলে সাহিত্যের সকল পাতায় অনিবার্যভাবেই উঠে আসে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়। যা মূলত আমাদের তথা বাঙালি জাতির সামগ্রিক ইতিহাসের এক বিরাট অংশ বলেই দাবি করা চলে।
লোকসাহিত্যের মধ্যে— প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, পল্লিগান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া ইত্যাদি সত্যিই এক আনন্দের সামগ্রী বটে। এ উপকরণগুলো পল্লির অতি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা নিয়েই প্রতিফলিত হয়েছে। পল্লিগ্রামের একজন মইশাল যখন জীবনের প্রয়োজনে বাণিজ্য কিংবা অন্য কোনো কাজের জন্য ঘরের বাইরে চলে যায় এবং বাইরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে দূর দেশের জনগণের মাঝে, তখন তার ঘরের অতি আপনজন চিন্তিত হয়ে অসহনীয় সময় কাটায়। ঘরের স্ত্রী দূর দেশে স্বামীর অবস্থানের কারণে অস্থির হয়ে ওঠে। তার সময় যেন আর কিছুতেই কাটতে চায় না। তখন বিরহী স্ত্রীর মনের কথাগুলো বাতাসের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে বেড়ায়—
ওকি গাড়িয়াল ভাই
কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়ারে….।
আজকাল বিনোদনের জন্য আধুনিক জীবনের অনেক কিছুই হাতের কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু আগেকার দিনে জনজীবনের চিত্তবিনোদনের জন্য তেমন কিছুই ছিল না। তখন গ্রামীণ জীবন ছিল নিতান্ত সহজ সরল ও অনাড়ম্বর। সেখানে চিত্তবিনোদনের একমাত্র অবলম্বন গ্রামীণ কিছু খেলাধুলা। সে সকল খেলাধুলা লোকসাহিত্যের পাতায় আপন ঐশ্বর্যগুণে স্থান করে নিয়েছে। যেমন—
এক হাত বোল্লা বারো হাত শিং
উড়ে যায় বোল্লা ধা তিং তিং ।
এ কথাগুলো গ্রামীণ ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে খেলার সময় বিপক্ষ দলকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে ছড়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। বিশেষ করে কাবাডি খেলায় ঐ ছড়াটি বেশি ব্যবহৃত হয়।
ঐতিহ্যের দলিল লোকসাহিত্য : বাংলাদেশের লোকসাহিত্যের নানা উপকরণ পল্লিগ্রামের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমাদের গ্রামের মায়েরা আজও ভুলতে পারেন না সেসব লোকজ ছড়ার কথা যা তাদের দুরন্ত সন্তানকে শান্ত করার জন্য শোনান। যেমন— রাখালের পিঠা গাছের কথা, রাক্ষসপুরির ঘুমন্ত রাজকন্যার কথা, পঙ্খিরাজ ঘোড়ার কথা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের লোকসাহিত্যে রাজনীতিক চিত্র : বিভিন্ন সময়ে রাজনীতির টানাপোড়েনের মধ্যেও লোকসাহিত্যের অমূল্য উপকরণগুলো সত্যিই এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে টিকে আছে। ইতিহাসের পাতা উল্টালেই আমরা দেখতে পাই বাংলার বুকে অত্যাচারী বর্গীদের তাণ্ডবের চিত্র। এ বর্গীর চিত্র বাংলার অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত কবি সাহিত্যিকরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমাদের উপহার দিয়েছেন—
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কীসে….?
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাহিত্য মানেই সমাজ তথা জীবনের আয়না। এ সাহিত্য-আয়নায় জীবন ও সমাজের নানা ধরনের ভাঙাগড়ার ইতিহাসের জীবন্ত চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আর এ কারণেই আমাদের জাতীয় জীবনে লোকসাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ভবিষ্যতে যাতে শহুরে আধুনিক মন-মানসিকতার কারণে বাঙালির ঐতিহ্য বাংলাদেশের লোকসাহিত্য বিলীন হয়ে না যায় সেদিকে আমাদের সকলের দৃষ্টি রাখা একান্ত আবশ্যক।
আরও দেখুন ❏ রচনা: কৃষি উদ্যোক্তা