রচনা

রচনা: আমার প্রিয় উপন্যাস

আমার প্রিয় উপন্যাস : বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য রচনা: আমার প্রিয় উপন্যাস’ ক্লাস ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ / class 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12 ও ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণী এবং এসএসসি / SSC ও এইচএসসি / HSC সমমান পরীক্ষা pdf সহ সকল ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার জন্য যথাক্রমে; ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০ অথবা 100, 150, 200, 250, 300, 400, 500, 1000 শব্দ / শব্দের ৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ টি বাক্যে, প্যারা বা পয়েন্ট আকারে, আমার প্রিয় উপন্যাস বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি দেওয়া হল।

রচনা: আমার প্রিয় উপন্যাস

ভূমিকা : উপন্যাসের কাজ সমাজজীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরা। বিভিন্ন চরিত্র তাদের একমাত্রিক আলো আর বহুমাত্রিক রজক নিয়ে উপন্যাসে পাদক্ষেপ করে ঠিকই, কিন্তু সত্যি-সার্থক উপন্যাস তাই-ই, যা আসলে একটি সময়কে, একটি সমাজকে, একটি সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। আমাদের মনে শেষ পর্যন্ত একটি জীবনবোধ ও প্রশ্ন রেখে যেতে সক্ষম হয়। বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ । গভীর জীবনবোধ, অন্তর্লোকের রহস্য অনুসন্ধানস্পৃহা ও সংস্কারকামী মনের অভিব্যঞ্জনায় তাঁর উপন্যাস, ছোটগল্প ও নাটক ঋদ্ধ। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’ আমার প্রিয় গ্রন্থ। বাংলাদেশের সাহিত্যে, যেসব উপন্যাস প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সেগুলোর মধ্যে ‘লালসালু’র স্থান অনন্য। গ্রাম্য জীবনের পটভূমিকায় রচিত এই উপন্যাসটিতে লেখক ধর্মের নামে স্বার্থান্ধ মানুষের কার্যকলাপ অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রাম বাংলার বাস্তব চিত্র হিসেবে এই উপন্যাসটি অত্যন্ত মূল্যবান। আর সে জন্যেই এটি আমার অতি প্রিয়।
এই উপন্যাসে ঔপন্যাসিক জীবন ও চরিত্রকে কার্য ও কারণের সঙ্গে মিশিয়ে চিত্রিত করেছেন। তিনি যে মানুষ দেখেছেন, সে মানুষ বিপন্ন, পর্যুদস্ত, আনন্দহীন। যে সমাজের ভগ্নদশায় মানুষের বাস সে দশাকে দেখার মানসিকতা এই ঔপন্যাসিকের ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে মজিদ নামের এক ধর্ম ব্যবসায়ীকে চিত্রিত করার জন্যে এ উপন্যাস রচিত। কিন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করলে দেখা যাবে, এ উপন্যাসে ব্যাপকভাবে জীবনকে চিত্রিত করা হয়েছে। লালসালু’র রঙিন আবরণে ঢাকা থাকে বহু বেদনা ও বঞ্চনার কাহিনি, লেখা থাকে বহু ব্যর্থ কামনার ইতিহাস। সেই ইতিহাসের নগ্ন বিবৃতি ‘লালসালু’। পুণ্যবান পুরুষদের সমাধিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন শুধু বাঙালি সমাজে নয়, বহু সম্প্রদায় এবং নানা জাতির মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। বাঙালি মুসলমান সমাজে রয়েছে এ জিনিসটির আতিশয্য। মাজারের প্রতি দুর্বলতা এ সমাজের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার মধ্যে কম-বেশি লক্ষ করা যায়। আর এ দুর্বলতার সুযোগে ধর্ম ব্যবসায়ী স্বার্থান্বেষীরা তাদের ভাগ্য গঠনে সচেষ্ট হয়। এ সমাজে ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাধারণ মানুষকে যথেচ্ছ প্রতারণা করার যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান। এ মাটির শাসক-শোষক শ্রেণির অন্যতম হলো ধর্ম ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। তাদের কাছে মানুষের দুবলতাই বড় পুজি। ‘লালসালু’র কাহিনিটি উপরে উপরে এমনি একটি ভূঁইফোড় মাজার কেন্দ্রিক গল্প, কিন্তু ভেতরে ভেতরে গ্রামের বাঙালি মুসলমান সমাজজীবনের আলেখ্য।

চরিত্র বিক্ষেপ : কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের রূপাঙ্কনেই ঔপন্যাসিকের প্রধান কৃতিত্ব। মজিদের চরিত্রাঙ্কনে ঔপন্যাসিক কোনো অস্পষ্টতা রাখেননি। যে মাজারকে কেন্দ্র করে সে চেয়েছিল অস্তিত্বের অধিকার, তা ছিল বানানো, দারিদ্র্য মুক্তির একটি হাতিয়ার। অসাধারকে কুশলী অভিনেতা, বাকপটু, ধূর্ত মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করে এবং গ্রামের অশিক্ষিত মানুষের দুর্বলতাকে ব্যবহার করার প্রয়াস পায়। গ্রামে প্রান্তিক একটি পরিত্যক্ত কবরকে মোদাচ্ছের পিরের মাজার হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং বানানো ও মিথ্যা কথার মাধ্যমে গ্রামবাসীর বিশ্বাস স্থাপন করাতে সক্ষম হয়। মাজার হলো মজিদের জীবনের সুখ ও সচ্ছলতার উৎস। ‘লালসালু আবৃত মাজারটি বাঙালি মুসলমানের নিস্তরঙ্গ, নিশ্চেতন ও অনড় সমাজেরই প্রতীক।

সমাজ ও ধর্মের পারস্পরিকতার : একটি স্থাবর সামন্তবাদী সমাজের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এভাবে- “জীবন স্রোতে মজিদ আর খালেক ব্যাপারী কি করে এমন খাপে খাপে মিলে গেছে যে, অজান্তে অনিচ্ছায়ও দু’জনের উল্টোপথে যাওয়া সম্ভব নয়। একজনের আছে মাজার, আরেক জনের জমি-জোতের প্রতিপত্তি। সজ্ঞানে না জানলেও তারা একাট্টা, পথ তাদের এক।” শ্রেণিবিভক্ত সামন্তবাদী সমাজে তাদের সে পথ হলো শোষণের, শাসনের, নির্যাতনের। ঔপন্যাসিক একটি মাজারের ও তার খাদেমের ওপর যে তীক্ষ্ণ আলো ফেলেছেন তাতে উদ্ভাসিত হয়েছে বাংলার জনজীবনের এক বিরাট অংশ। মোড়ল-মুৎসুদ্দী প্রভাবিত বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের এক উজ্জ্বল চরিত্র খালেক ব্যাপারী ।

মজিদ ছাড়া এ উপন্যাসের আগাগোড়া যে চরিত্রটি পল্লিপথে শুকাতে দেওয়া শাড়ির মতো টানটান্‌ বিস্তৃত সেটি মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমার। শুধু গ্রামবাসী নয়, বাংলার নিগৃহীত নিষ্পেষিত নিশ্চুপ মুখ বুজে থাকা নারী সমাজের এক প্রতিচ্ছবি রহীমা। মজিদ যদি শিকারির প্রতিমূর্তি হয় তবে রহীমা শিকারের। সংসার জীবনে সে নিরুত্তাপ, নির্জীব, ঈশ্বর ভয় ও স্বামী ভয়ে সে ভীত। স্বামীর ইচ্ছাতেই তার চলাচল, জীবনযাত্রার স্বাভাবিকতা। তাই স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী আনবে জেনেও সে নিরুত্তাপ, প্রতিবাদহীন।

উপন্যাসের প্রতিবাদী নারী চরিত্র ও নায়িকা : উপন্যাসের নায়িকা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা প্রতীকী চরিত্র হিসেবে উপস্থিত। সে মজিদের কল্পনার বিড়াল ছানার মতো একটি বউ নয়। তার স্বামী-ভয় কিংবা ঈশ্বর-ভয় কোনোটাই নেই। সে মজিদের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ । সম্ভাব্য সমাজ বদলের জন্যে যে আঘাত প্রয়োজন সে আঘাত করেছে জমিলা। তার নগ্ন পা মাজারের প্রাপ্ত স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে মজিদের সমস্ত ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মজিদের মুখে থুথু ছিটানো মানেই হচ্ছে সমগ্র ধর্ম ব্যবসায়ী ভণ্ডদের মুখে থুথু ছিটানো।

উপসংহার : মোড়ল শাসিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামীণ জীবনকে পরিমিত সূক্ষ্মতায় তুলে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। এই উপন্যাসটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এক ধূসরতায়, শেষ আর এক ধূসরতায়। শুরু এক উৎপ্রেক্ষায়, সমাপ্তি আর এক উৎপ্রেক্ষায়। এই উপন্যাসের মধ্যবর্তী পরিসর বহু বর্ণময়। সেই বর্ণিমা জীবনের ।
সব মিলিয়ে উপন্যাসটি কবিতাক্রান্ত নয়, জীবন ঘনিষ্ঠ। তাই উপন্যাসটি আমার প্রিয় গ্রন্থ।

আরও দেখুন ❏ রচনা: আমার জীবনের লক্ষ্য

Tips Gateway

আসসালামু আলাইকুম, টিপস গেটওয়ে.কম ওয়েবসাইটে আপনাকে জানায় স্বাগতম। আমারা আমাদের সাইটে সকল ধরণের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক, ধর্মীয়, বিনোদন ও শিক্ষামূলক, সাধারন জিজ্ঞাসা, চাকরি বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষার সময়সূচী, প্রবেশপত্র, প্রশ্ন সমাধান ও ফলাফল, মনীষীদের উক্তি, বাণী ও ফেসবুক সহ বিভিন্ন বিষয়ের স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, ছবি, ট্রেন, বাস ও বিমানের সময়সূচী, পোস্ট কোড, ভ্রমণ, সিমের অফার এবং রুপান্তরকারী ক্যালকুলেটর সহ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় লেখালেখি করে থাকি। যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের ইন্টারনেটে প্রতিদিনের নিত্যনতুন প্রয়োজনীয় সকল তথ্য চাহিদা পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ্‌।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button