
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য রচনা: আমার প্রিয় শখ’ ক্লাস ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ / class 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12 ও ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণী এবং এসএসসি / SSC ও এইচএসসি / HSC সমমান পরীক্ষা pdf সহ সকল ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার জন্য যথাক্রমে; ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০ অথবা 100, 150, 200, 250, 300, 400, 500, 1000 শব্দ / শব্দের ৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ টি বাক্যে, প্যারা বা পয়েন্ট আকারে, আমার প্রিয় শখ বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি দেওয়া হল।
রচনা: আমার প্রিয় শখ
ভূমিকা : আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গত্বাঁধা কাজ করতে করতে অনেক সময় শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়ি; অবসাদ আমাদের ঘিরে ধরে। তখন দরকার হয় একটু অবসর বা অবকাশ যাপনের। আর সেই অবসরের সময়টুকু আনন্দময় করে তোলার জন্য কোনো বিশেষ ধরনের কাজ করাটাই হলো শখের কাজ। ‘শখ’ শব্দটি ইংরেজি ‘হবি’ শব্দের পরিভাষা। এটাকে মানুষের এক ধরনের খেয়ালও বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে শখ বলতে কোনো ব্যক্তির প্রধান পেশাকে না বুঝিয়ে তার বৃত্তিকে বোঝায়। আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বাচার জন্য এটার ওপর নির্ভর করি । আমাদের অবসর কাটানোর ক্ষেত্রে এটা শুধু একটি আনন্দদায়ক পন্থা।
বিভিন্ন রকমের শখ : মানব-মন বিচিত্র। এক একজনের মনের চাহিদা এক এক রকম। ব্যক্তিভেদে শখের পার্থক্য বা ভিন্নতা দেখা যায়। শখ মূলত এক ধরনের সাধ, যা নিতান্ত ব্যক্তির নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ব্যক্তি বিশেষের রুচি ও মানসিকতা অনুযায়ী গড়ে ওঠে। তাই কেউ ছবি আঁকতে, কেউ বাগান করতে ভালোবাসে। আবার দেখি কারও শখ ডাক টিকিট সংগ্রহ, কারও শখ বিদেশি পড়তে, কেউ সিনেমা দেখতে, কেউবা আবার শিকার করতে ভালোবাসে। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করাও অনেকের অবকাশ যাপনের মুদ্রা সঞ্চয়, কারো শখ ঘুড়ি ওড়ানো। এছাড়াও কেউ মাছ ধরতে, কেউ ছবি তুলতে, কেউ গান গাইতে, কেউ নৃত্য করতে, একমাত্র আন্তরিক সাধ, যা থেকে সে আনন্দ সঞ্চয় করে দেহ-মনকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
আমার প্রিয় শখ। বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন রকমের শখ থাকে। তেমনি আমারও কিছু রয়েছে। আমার অন্যতম প্রিয় শখ হলো বিচিত্র ধরনের অভিযান কাহিনি, অ্যাডভেঞ্চার ও ভ্রমণ কাহিনি পাঠ করা। এছাড়াও অবসরে আমি বাগান করতে ও গান শুনতে ভালোবাসি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলব, এটা আমার অত্যন্ত ব্যক্তিগত আনন্দের ব্যাপার। কারণ, ভ্রমণ ও অভিযান কাহিনির মধ্যে আমি পাই এক ধরনের শখের কারণ । যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন আমি ভ্রমণ ও অভিযান কাহিনির বই পড়াকে প্রিয় শখ হিসেবে বেছে নিলাম। তাহলে আমি রোমাঞ্চ, যা আমার মনকে করে দোলায়িত, করে তোলে সতেজ-সজীব। প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায় ও নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযান কাহিনি আমার সবচেয়ে প্রিয়। এছাড়া, আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন ও শওকত আলীর দুটি অভিযান কাহিনিও আমার খুব ভালো লেগেছে। অভিযান কাহিনি পড়ার সময় বন-জঙ্গলের রহস্যময় বর্ণনা, সমুদ্র-পাহাড়ে দুঃসাহসিক অভিযান, দুর্ধর্ষ কল্পকথা ও নানা উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার কৌশল আমাকে উল্লসিত ও উদ্বেলিত করে তোলে।
শখের রূপায়ন : সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘জলে ডাঙায়’ ভ্রমণ কাহিনিটি পড়ে মিশরকে আমি প্রথম চিনতে ও ভালোবাসতে শুরু করি। তাঁর অপূর্ব সুন্দর বর্ণনা আমাকে পরিতৃপ্ত করে। তাঁর ‘দেশে-বিদেশে’ বইটি পড়েও আমি আনন্দে অভিভূত হয়েছি। আফগানিস্তানের পার্বত্যভূমির মনোরম বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে পাঠান আবদুর রহমানের শুভ্র মনের পরিচয়- এ ভ্রমণ কাহিনিকে আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। অন্নদাশংকর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’ ও ‘জাপানে’; মনোজ বসুর ‘চীন দেখে এলাম’, সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘আমার দেখা রাশিয়া, ইব্রাহীম খাঁর ‘ইস্তাম্বুল যাত্রীপর পত্র’, মুহাম্মদ আবদুল হাইয়ের ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’, আবুল কালাম শামসুদ্দীনের ‘নতুন চীন নতুন মানুষ’ বইগুলো আমি পড়েছি। পড়েছি বাংলায় অনূদিত ‘রবিনসন ক্রুসো’ এবং ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দি সি’ নামক শ্রেষ্ঠ দুটি রোমাঞ্চকর বই। এছাড়াও অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ মেশানো গন্ধে ভরা ডিটেকটিভ বই ‘ব্যোমকেশ’ ও ‘মাসুদরানা’ পড়ে আমি অবর্ণনীয় আনন্দ উপভোগ করেছি। এসব বইয়ে বিভিন্ন দেশের বর্ণনা ও সেসব দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি, সমুদ্র-পর্বত-অরণ্যসহ নানা অজানার পরিচয় আমার মনকে আলোকিত করেছে। আমার বোধকে সমৃদ্ধ করেছে। সর্বোপরি, এসব বই পাঠ করে আমি অনেক নির্মল আনন্দ লাভ করেছি।
শখের উপকারিতা : বিশেষ শখ বা খেয়াল একজন মানুষকে আপনভাবে; আপন মনে নিজস্ব আনন্দে নিমগ্ন রেখে ব্যক্তিত্বকে তৈরি হতে বা ঋদ্ধ করতে সুযোগ করে দেয়। কোনো কোনো শখ আবার বেশ শিক্ষাপ্রদও বটে। সে হিসেবে আমার শখটি যেমন শুভ আনন্দপ্রদ তেমনি সহজাত শিক্ষাবান্ধব ও জ্ঞানবর্ধক। অবশ্য আমার বই পড়ার শখ মেটাবার পেছনে আমার বাবা-মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাবা আমার পছন্দের বই পেলেই কিনে আনেন। মাও বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে বই কিনে দেন। তার মধ্যে একুশে গ্রন্থমেলা একটি। তাঁদের কেনা বইগুলোতে আমার প্রিয় পছন্দের বিষয়গুলোই প্রাধান্য পায়। আর তাতে আমি একদিকে যেমন আনন্দ সঞ্চয় করি তেমনি অন্যদিকে করি বিচিত্র শিক্ষা লাভ।
উপসংহার : বিচিত্র এ জগতের বিচিত্র মানুষ বিভিন্ন কাজে অনবরত ছুটে চলছে জীবনের নানা পথে। এরূপ ছুটে চলার মধ্যেও প্রত্যেকের একটা নিজস্ব মানসিক পরিমণ্ডল গড়ে নিতে হয়। যে পরিমণ্ডলে সে আপন শখে বিভোর হয়ে কর্মব্যস্ত জীবনকে উপভোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে। তাই সেদিক থেকে বিচার করে মানবজীবনে শখ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বই পড়ে আমি আমার শখ মেটাই— এতে পাই আমি নির্মল আনন্দ ও অপার সুখ। আমার শখ আমার কাছে সুনির্বাচিত, শিক্ষাপ্রদ, মার্জিত এবং শৈল্পিক। তাই আমি আমার শখ মিটাতে পেরে যেমন আনন্দিত তেমনি গর্বিত।
আরও দেখুন ❏ রচনা: আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা