
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য রচনা: আমার জীবনের লক্ষ্য’ ক্লাস ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ / class 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12 ও ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণী এবং এসএসসি / SSC ও এইচএসসি / HSC সমমান পরীক্ষা pdf সহ সকল ধরণের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার জন্য যথাক্রমে; ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৪০০, ৫০০, ১০০০ অথবা 100, 150, 200, 250, 300, 400, 500, 1000 শব্দ / শব্দের ৫, ৮, ১০, ১২, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ টি বাক্যে, প্যারা বা পয়েন্ট আকারে, আমার জীবনের লক্ষ্য বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি দেওয়া হল।
রচনা: আমার জীবনের লক্ষ্য
সূচনা : প্রত্যেকের জীবনের একটি লক্ষ্য থাকতে হয়। লক্ষ্যবিহীন জীবন কাণ্ডারীবিহীন নৌকার মতো, কোথাও পৌঁছাতে পারে না। পক্ষান্তরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য একমুখী তীরের মতো, স্বল্পতম সময়ে লক্ষ্যে সুদৃঢ় অবস্থানে পরিকল্পনা মাফিক পৌঁছে দেয়। শিশুকাল মানুষের স্বপ্ন দেখার সময়। এ সময় থেকেই মানুষ আগামীর স্বপ্ন দেখে। নানান চিন্তা ও কল্পনায় সময় কাটে। বড় হয়ে কী হবে আর কী হবে এ নিয়ে সচরাচর স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। এটাই জীবনের বৈশিষ্ট্য। কেননা প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকা উচিত ভবিষ্যৎ জীবন তার কেমন হবে। আর কেমন করে কীভাবে জীবনে পরিপূর্ণতা লাভ করবে তারই চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করা। শৈশবে জীবনের লক্ষ্য স্থির করাই হচ্ছে সচেতন মানুষের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই ছাত্রাবস্থায় এর লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
জীবনে লক্ষ্য কেন চাই : মানব জীবনের সার্থকতা লাভের জন্য একটা দৃঢ় সংকল্প চাই। কবিও আমাদের এ কথা জানিয়েছেন—
মনরে
কৃষিকাজ জানো না
এমন মানবজমিন রইল পতিত
আবাদ করলে ফলতো সোনা
কৃষিকাজ জানো না ।
মানব জীবনে অবশ্যই সোনা ফলাতে হবে। এজন্য চাই যথাসময়ে নিজেকে তৈরি করা এবং সঠিক সময়ে জীবনের লক্ষ্য স্থির করা। মানব জীবনকে সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর সাধনা করা দরকার। জীবনের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার ক্ষেত্রে নানা বাধা-বিপত্তি আসবে ও থাকবে। কিন্তু এতে পিছনে ফিরে তাকিয়ে জীবনের আশঙ্কায় ভীত হলে চলবে না। সম্মুখে স্থির লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে হবে, এজন্য সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে, থেমে থাকা চলবে না। জীবনের সূচনাতেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করা চাই।
আমার জীবনের লক্ষ্য : আমার জীবনের লক্ষ্য আমি একজন সুদক্ষ কৃষক হবো। আমার লক্ষ্য জেনে অনেকেই হয়ত আমাকে উপহাস করবে। কিন্তু আমার জীবনের স্থির লক্ষ্যই হচ্ছে একজন আদর্শ কৃষক হওয়া। আমার এ লক্ষ্যকে অনেকেই সামান্য এবং দীন মনে করতে পারে। আমি তাদের দোষ দেই না। কারণ দোষ তাদের নয়, দোষ তাদের দৃষ্টির সংকীর্ণতার। আমাদের দেশে কৃষক বলতে সবাই মনে করেন— যার কোনো শিক্ষা নেই, কোনো স্বাস্থ্য নেই, কোনো খাওয়া-পরার সংস্থান নেই এমন একজন মানুষ। আমি সে রকম আদিম প্রকৃতির কৃষক হতে চাই না। আমি চাই একজন আধুনিক যুগের শিক্ষিত ও সুদক্ষ বিজ্ঞান নির্ভর প্রগতিশীল কৃষক হতে।
কেন এমন ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছি : বন্ধু মহলের কেউ হতে চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কেউ কেউ আবার ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ বা অর্থনীতিবিদ। সবাই চাকরিকেই একমাত্র লক্ষ্যরূপে স্থির করেছে। বাংলাদেশে এ চাকরি প্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সারাদেশে লোকসংখ্যার অধিকাংশের জীবিকার আয়োজন করে দেওয়া ও তার দায়-দায়িত্ব মুষ্টিমেয় কিছু নিরক্ষর রুম পরিবর্তন বিমুখ দরিদ্র কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে বসে আছি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। আমাদের শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের কেউ কি সে মাটির ডাকে সাড়া দিবে না? তাইতো কবি গুরু বলেছেন—
ফিরে চল
ফিরে চল মাটির টানে।
তাই আমি যেতে চাই কবি গুরুর ভাষায় একমত হয়ে, চাই ফিরে যেতে ঐ মাটির কোলে। যে কোল সবারজীবনের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল— আমার দেশের মাটির কোলে।
আমাদের দেশের কৃষক ভোঁতা লাঙল আর কঙ্কালসার বলদ নয়, উন্নত ট্রাক্টর নিয়ে মাঠে কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করে। উচ্চ ফলনশীল ও দ্রুত ফলনশীল বীজ ব্যবহার করে তারা আশানুযায়ী ফল পায়। আমাদের সমাজের চাহিদা মেটাতে তারা সম্পূর্ণ সক্ষম হওয়ার পরেও বাংলাদেশের কৃষক আজ সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। যে কৃষকের ওপর দেশের জনগণের খাদ্য যোগানোর দায়িত্ব, তারা যদি সময়মতো প্রয়োজন অনুসারে সার, বীজ না পায়, যদি জমিতে পানি সেচ না দিতে পারে, যদি উৎপাদিত শস্যের আশানুরূপ লাভ ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগী খেয়ে নেয় তাহলে কী করে কৃষির উন্নতি হবে। কী করে জনগণের খাদ্যের সংস্থান হবে। আজ আমাদের দেশের কৃষকের গায়ে বল নেই, তাদের চোখের জলে জমির মাটি ভিজে ওঠে। তবুও যদি পরিকল্পনা মাফিক জমিতে জল পৌঁছাত— তাহলে হয়তো কিছুটা চাহিদামাফিক ব্যবস্থা হতো। তাই আমি সে হতাশাগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি আমার জীবন কৃষিসেবায় আত্মনিয়োগ করে সাধ্যমতো দেশসেবা করে যাব। আর এরই মাঝে আমার জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের সার্থকতা নিহিত বলে আমি মনে করি।
উপসংহার : আমি আমার লক্ষ্যের কথা অকপটে বললাম। এ আমার কোনো স্বপ্ন নয়। কথার ফুলঝুরি নয়, হঠকারি কোনো সিদ্ধান্ত নয়, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের এক কৃষক সন্তানের সচেতন চিন্তার ফল। কৃষি সাধনাই দেশের সমৃদ্ধি লাভের মূল চাবিকাঠি। কৃষির উন্নতিই দেশের সকল উন্নয়নের রুদ্ধদ্বার খুলে দিবে। মানুষের মুখে হাসি ফুটাবে। আমার বিশ্বাস যদি আমার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি না থাকে এবং মনের একাগ্রতা অটুট থাকে, তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চয় সফলতা লাভ করব। কথায় আছে- ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। এ শপথ বাক্য সাথে করে আমাকেই সাফল্যের সিংহদ্বার দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। আমার বিশ্বাস নতুন উদ্যম ও প্রেরণায় যাদ আমি সঠিক পথে পা বাড়াই অবশ্যই এর সফলতা আমি পাব। আর আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা-
তোমার পতাকা যারে দাও প্রভু
তারে বহিবারে দাও শকৃতি।
আরও দেখুন ❏ রচনা: আমার প্রিয় শখ